খুন হবেন বুঝে পালানোর চেষ্টা এমপি আনারের
বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় :
২৮-০৬-২০২৪ ০৮:০০:৪২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৮-০৬-২০২৪ ০৮:০০:৪২ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে ঢুকে মোস্তাফিজুর রহমান এবং জিহাদকে দেখে আঁতকে ওঠেন এমপি আনার। কারণ, মোস্তাফিজুর রহমানকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে আগে থেকেই তিনি চিনতেন। বাংলাদেশের ভাড়াটে খুনিকে ওই ফ্ল্যাটে দেখতে পেয়েই তিনি বিপদ আঁচ করতে পারেন। তিনি নিশ্চিত হন তাকে খুন করা হবে। এ সময় তিনি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের সবার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। তখন ফয়সাল আলী সাহাজী তাকে পেছন থেকে মুখে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরেন। এতেই অচেতন হয়ে পড়েন আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর ধীরেসুস্থে তাকে হত্যা করা হয়। খাগড়াছড়ি পাহাড় থেকে গ্রেফতার হওয়া ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তাদের দুজনের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এর আগে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল জানান, হত্যার বিষয়টি যখন এমপি আনার বুঝতে পেরেছিলেন তখন অনেক কাকুতি-মিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। পরে দৌড় দিয়ে বের হতেও চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় মোস্তাফিজুর তার নাকে মুখে ক্লোরোফর্ম ধরে নিস্তেজ করেন। এরপর হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করা হয়। হত্যার পর ১৯ মে দেশে চলে আসেন হত্যাকারীরা। তিনি বলেন, কলকাতায় বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হওয়ার পর আনারকে নিয়ে সঞ্জীভা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় ফয়সাল। এদিকে সঞ্জীভা গার্ডেন্সে অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজ, জিহাদ হাওলাদার। ফয়সাল ও শিমুল ভূঁইয়া আনারকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে রিসিভ করেন শিলাস্তি রহমান ও মোস্তাফিজুর। গতকাল মোস্তাফিজুর ও ফয়সালের রিমান্ডে আবেদনে বলা হয়, ইতিপূর্বে গ্রেফতার এবং আদালতে সোপর্দ হওয়া শিমুল ভূঁইয়া ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দি পর্যালোচনা ও তদন্তকালে জানা যায়, এমপি আনারকে অপহরণপূর্বক হত্যায় ঘাতক দলের প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূঁইয়ার কিলিং মিশনের সহযোগী হিসেবে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরের সংশ্লিষ্টতা ছিল (ভাড়াটে খুনি হিসেবে)। ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদকে নিয়েই শিমুল ভূঁইয়া কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করেন। তদন্তে জানা যায়, শিমুল ভূঁইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীন পরিকল্পনা মতে ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অঙ্কের অর্থ দেবেন বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখেন। তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০ মে এবং ফয়সাল ১২ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন্সের বাসায় ওঠেন। এমপি আনার ১২ মে কলকাতায় যান এবং ১৩ মে অন্য আসামিদের প্রলোভনে ফয়সাল ও শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে সঞ্জীভা গার্ডেন্সের বাসায় যান। আনারকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ থেকে কলকাতার নিউটাউনের বাসায় নেওয়া ও হত্যা করে লাশ গুম করা পর্যন্ত ঘাতক ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন। আনারকে অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রকাশিত হলে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের নাম পরিচয় ও চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। ডিবির ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে যে, ফয়সাল ও মোস্তাফিজ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থান করছেন। এর ভিত্তিতে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গত ২৬ জুন আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে গ্রেফতার করে।
মিন্টুর মুক্তির দাবির পোস্টারে জেলা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার : ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডের আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবির পোস্টারে জেলা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করা নিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা মিন্টুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার রয়েছেন।
তারা চাইছেন দলের পক্ষ থেকে মিন্টুর মুক্তি দাবি জানানো হোক। তেমনি দলের বেশির ভাগ নেতা চাইছেন মিন্টু যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিচার এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থার। তবে পুরো বিষয়টি তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে চেয়ে আছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin
কমেন্ট বক্স